সাটুরিয়া প্রতিনিধি ৩ মে:
সাটুরিয়া উপজেলার গোপালপুর – রাজৈর ব্রীজ নির্মাণ নিয়ে প্রস্তাবিত স্থান থেকে ১ হাজার মিটার উত্তরে নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে বরাইদ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হাই এ বিরুদ্ধে । বুয়েট কর্তৃক নকশা অনুযায়ী ব্রীজ নির্মাণ না হলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলকাবাসী। গোপালপুরসহ ২০ টি গ্রামের প্রায় দুই হাজার মানুষ এর স্বপক্ষে স্বাক্ষর দিয়ে লিখিত অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়ন একটি প্রসিদ্ধ ইউনিয়ন। এ জনপদটি ধলেশ^রী নদী দ্বারা বিভক্ত। এ নদীর দুই পারেই এ ইউনিয়ন। গোপালপুর বাজার সংলগ্ন খেয়া ঘাট দিয়ে সাটুরিয়া, দৌলতপুর উপজেলা উপজেলাসহ টাঙ্গাইল জেলার একাধিক গ্রামের মানুষ প্রতিদিন ৫০ টি গ্রামের ২০ হাজার লোক যাতায়াত করেন।
গোপালপুর বাজারে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আপেল মাহমদু চৌধুরী বলেন, গোপালপুর বাজার বরাবর রাজৈর-গোপালপুর (পূর্বপার্শ) ও রাজৈর (পশ্চিমপার্শ) ধলেশ্বরী নদীর উপর একটি ব্রীজ নির্মাণ চুরান্তাভাবে প্রক্রিয়াধীন আছে। প্রথমে বুয়েটের প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি টিম সর্ব প্রথম সরজমিন পরিদর্শন করে গোপালপুর বাজার সংলগ্ন মাইনকার খেয়া ঘাটে ব্রীজটি নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয় এবং সে অনুসরনে প্রাথমিক এলাইনমেন্ট নকশা প্রণয়ন করে সব কাজ শেষে টেন্ডারের ঘোষনা দেন কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু বরাইদ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হাই, সাটুরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে জন সার্থ উপেক্ষা করে ব্রীজটি সরিয়ে উত্তর দিকে আনুমানিক ১০০০ মিটার দূরে তার নিজ বাড়ীর স্থানে ব্রীজ নির্মাণের পক্রিয়া শুরু করেন। চেয়ারম্যান বাড়ীর নিকট থেকে ব্রীজ নির্মাণ হলে সাটুরিয়া উপজেলা ও দৌলতপুর উপজেলার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ বিঘিœত হবে। দৌলতপুর ও ঘিওর উপজেলার দূরবর্তী জনগণসহ দড়গ্রাম ও সাটুরিয়া ইউনিয়ন এবং রাজৈর, ধূলট, কাকরাইদ, গালা, ঘরিয়ালা গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার লোকের দৈনন্দিন যাতায়াত বিঘ্নিত হবে।
গোপালপুর গ্রামের ধলু বলেন, গোপালপুর বাজার সংলগ্ন ব্রীজ নির্মাণ না হলে, বৃহৎ পশ্চিম অঞ্চল হতে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের অত্র এলাকার স্বনামধন্য দড়গ্রাম কলেজ, দড়গ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়, দড়গ্রাম সিনিয়র মাদ্রাসা, দড়গ্রাম হাফিজিয়া মাদ্রাসা, গোপালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে যাতায়াতসহ সাধারণ জনগণের দড়গ্রাম বাজার ও গোপালপুর বাজারে যাতায়াত ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে – ব্রীজটি পুরোপরি সহায়ক হবে না।
ধুলট গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, ব্রীজটি উত্তর দিকে পরিবর্তন হলে শতাধিক আধা-পাকা ঘর/বসতবাড়ি, ৩টি কবরস্থান, ১টি মসজিদ ভাঙ্গা পড়বে। ফলে সরু রাস্তার সাথে ব্রীজের কানেকটিং রাস্তা ও প্রশস্ত এপ্রোচ নির্মানের জন্য প্রচুর বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনা ভাঙ্গার ক্ষতিপূরণ প্রদানের কারণে সরকারকে অতিরিক্ত বহু কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে।
রাজৈর গ্রামের জিয়াউর রহমান বলেন, সরকারি অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহারে জনগণের সর্বোচ্চ সুফল প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ব্রীজ নির্মাণের জন্য বুয়েট কর্তৃক নির্ধারিত ১ম প্রস্তাবিত মাইনকার খেয়া ঘাট বরাবর করা প্রয়োজন।
গোপালপুরের মো. মিহির আলী বলেন, ৫ বছর ধরে শুনে আসছি, ব্রীজ নির্মাণ হবে গোপালপুর – রাজৈর ঘাটে। এখন শুনতাছি চেয়ারম্যানের বাড়ীর নিকট হবে। আমরা কোন অবস্থাতেই ব্রীজ গোপালপুর বাজারের উত্তরে নির্মাণ করতে দিব না।
চর রাজৈর লাল চান মিয়া বলেন, ব্রীজ গোপালপুর বাজারের নিকটে না হলে, দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলব। প্রয়োজনে ব্রীজের কোন নির্মাণ সামগ্রী অন্য স্থানে নিয়ে যেতে দিব না। অতি শিগ্রই ভুল সিদ্বান্ত থেকে না সড়ে আসলে আমারা ব্রীজ সঠিক স্থানে নির্মাণের জন্য মানববন্ধনসহ বৃহত্তর কর্মসূচি গ্রহণ করব।
রৌহা গ্রামের গোলাম মোস্তফা বলেন, চেয়ারম্যান বাড়ীর নিকট থেকে ব্রীজ নির্মাণ হলে, সাটুরিয়ার সাথে – দৌলতপুর ও টাঙ্গাইল জেলার মানুষের কোন উপকার আসবে না। ব্রীজটি বাজার সংলগ্ন নির্মিত হলে, এ এলাকার কৃষকের উৎপাদিত ফষল হাট বাজারে নিতে খরচ কম হবে। উত্তরে গেলে কৃষকের অতিরিক্ত খচর হবে।
এ ব্যাপারে বরাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গজী আব্দুল হাই বলেন, বরাইদ ইউনিয়নের বৃহৎ স্বার্থেই ব্রীজটি যথা স্থানে নির্মিত হচ্ছে।
সাটুরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. নাজমুল করিম বলেন, প্রথমে বুয়েট কর্তৃক নকশা অনুযায়ী গোাপালপুর মাইনকার খেয়া ঘাটে ব্রীজটি নির্মানের জন্য নকশা করা হয়। পরে প্রকল্প পরিচালকের অফিস থেকে গোপালপুর মজিদের বাড়ি নিকট থেকে ডিজাইন করা হয়। পরে ৩য় বারের মত চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হাই এর বাড়ির নিকট থেকে ডিজাইন করা হয়। সর্বশেষ ডিজাইন অনুযায়ী ব্রীজ নির্মাণের জন্য টেন্ডারের পক্রিয়াধীন ছিল। কিন্তু এখানে ব্রীজ নির্মাণ হলে জনসার্থ বিঘ্নিত হবে বলে দাবী কওে, এখন আবার গোপালপুর বাজারের জন সাধারণ ব্রীজটি প্রথম নকশা অনুযায়ী গোপালপুর বাজারের নিকট করার জন্য প্রকল্প পরিচালক, জেলা প্রশাসক বরারব চিঠি দিয়েছেন। আমাকেও অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। এখন ব্রীজ কোথায় নির্মাণ হবে তা উর্ধতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিবে।
মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ৩ মে ২০২৪।