সাটুরিয়া প্রতিনিধি, ২ জুলাই:
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে বেড়েছে চুরি ছিনতাই। জুন মাসের শেষ সপ্তাহের ২৬ জুন তিল্লি ইউনিয়ন থেকে দুই বাড়ি থেকে ৭টি ও বালিয়াটি ইউনিয়নের এক বাড়ি থেকে ২ গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে দায়িত্ব অবহেলার কারনে সাটুরিয়া থানার দুই এস, আই এবং দুজন পুলিশ সদস্য কে থানা থেকে প্রত্যাহার করে মানিকগঞ্জ পুলিশ লাইনে গত সোমবার (১ জুলাই) রাতে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে দরগ্রাম ইউনিয়নের সাফুল্লি গ্রামের মসজিদ কমিটি কে কেন্দ্র সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষের মামলার ঘটনা ছাড়াও ধানকোড়া গিরিশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের এবং সাটুরিয়া বাস ষ্টান্ড থেকে দিন দুপুরে মোটর সাইকেল চুরি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সাটুরিয়া থানার দায়িত্ব অবহেলাই দায়ী করছেন সাটুরিয়া বাসী।
সাটুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাহবুব আলম পুলিশ সদস্য প্রত্যাহেরর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দায়িত্ব অবহেলার কারনে এস,আই আলামিন , জালাল উদ্দিন এবং পুলিশ সদস্য দোলন ও হালিমকে সাটুরিয়া থানা থেকে প্রত্যাহার করে মানিকগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে ১ জুলাই।
সাটুরিয়া থানার মামলা নং ১৪, তারিখ ২৮-৬-২৪ এর সূত্রে জানা যায়, সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি ইউয়িনের উত্তর পার তিল্লি গ্রামে ২৬ জুন রাত ১০ টার পরে যে কোন সময়ে ঐ এলাকার মৃত রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে নিফাজ উদ্দিনের টিনের ঘর থেকে ৪টি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। একই রাতে একই গ্রামের রহিম উদ্দিনের রহিম উদ্দিনের বাড়ি থেকে ৩ টি গরু চুরি যায়। পরে খোজাখোজি করে না পেলে ২৮ জুন নিফাজ উদ্দিন থানায় বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক নিফাজ উদ্দিন বলেন, আমি অনেক কষ্ট করে গরু গুলি লালন পালন করেছি। আমার ৪ টা গরু চুরি হওয়ার ৫ দিন হলেও থানা পুলিশ এখনও উদ্ধার করতে পারে নি। আমার প্রায় ৭ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
রহিম উদ্দিন বলেন, এই আধুনিক সময়ে এসে কিভাবে চুরি করে সাটুরিয়া উপজেলা পার হয়ে যায় আমাদের বুঝে আসে না। ৩ টি গরু গড়ে দেড় লক্ষ টাকা করে বিক্রি করতে পারতাম। সে হিসেবে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার গরু ৩ টি চুরি হয়েছে।
এ বিষয়ে তিল্লি ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, একই রাতে দুই কৃষকের বাড়ি থেকে বড় বড় ৭টি গরু চুরি হয়েছে আমার ইউনিয়নে। আমার ইউনিয়নটি নদী দ্বারা বিভক্ত। প্রতিটি বাড়িতেই গরু লালন পালন করে থাকে। এ চুরির ঘটনায় সকল চাষীদের মাঝে চুড়ির আতংক সৃষ্টি হয়েছে। পরে আমি আমার গ্রাম পুলিশ ও ইউপি সদস্যদের সাথে এলাকা বাসীদেও সমন্নয় করে রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করেছি।
এদিকে গত ২৮ জুন উপজেলার বালিয়াটি ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামের আলতাফ আলীর বাড়ি থেকে ২ টি গরু চুরি হয়। আলতাফ আলীর ছেলে হালিম বলেন, আমাদের ২ টি গরুর মধ্যে একটি বাছুর সহ, আরেকটি বকন গরু। যার আনুমিক মূল্য প্রায় ৪ লক্ষ টাকা । গত শুক্রবার (২৮ জুন) চুরির যাওয়ার পর পর সাটুরিয়া থানা থেকে পুলিশ আসে, বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবা করে গেছেন। এর পর ৪ দিন পার হলেও আমাদের বাড়িতে থানা থেকে কেউ আসেনি।
এদিকে দরগ্রাম ইউনিয়নের সাফুল্লি গ্রামের মো. দারগা আলীর পুত্র মহসিন মসজিদ কমিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি আপত্তিকর ষ্টাটাস দেন। এটিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মাঝে মারা মারির ঘটনা ঘটে। পরে দুই পক্ষই পাল্টা পাল্টি থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ নিয়ে গ্রামের দুই পক্ষের মধ্যে এক উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ধানকোড়া গিরীশ ইনষ্টিটিউশন এর প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার বলেন, এক মাস আগে আমার গ্রামের বাড়ি নয়া ডিঙ্গি থেকে বাজাজ ডিসকবারি ১১০ সিসি মোটর সাইকেল চুরি করে নিয়ে যায়। এর কয়েকদিন আগে আমার গ্রাম থেকে ২ টি এবং সাহেব পাড়া থেকে আরেকটি মোটর সাইকেল চুরি যায়। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করে পুলিশে দেই। পরে আমি বাদি হয়ে মামলা করলে। সেই আসামি দুজন জামিনে চলে আসে। আমার এক ভাই ধানকোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, আরেক ভাই ধানকোড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমি নিজে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আমার মোটর সাইকেল চুরি যায় এবং ঘটনার এক মাস পার হলেও তা উদ্ধার হয় না। তাহলে সাধারণ মানুষের কি অবস্থা হয় আপনারাই বলেন।
সাটুরিয়া বাস ষ্টান্ডের মোবাইল ব্যবসায়ী আজহার উদ্দিন বলেন, আমাদের এখানে মোবাইল কিনতে এসে ১৫ দিন আগে ডিসকবারী ১০০ সিসি মোটর সাইকেল চুরি যায়। পরে জিডি করে লোকটি। এর কয়েকদিন পর ২/৩ দিন দেখি একটি মোটর সাইকেল পরে রয়েছে। কেউ নেয় না। পরে জিডি করা ব্যক্তিদের খবর দেই। তাদের মোটর সাইকেল নিশ্চিত হওয়ার পর তারা নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে সাটুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাহবুব আলম বলেন, তিল্লি ইউনিয়নের গরু চুরি হওয়ার পরের দিনই পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আমরা থানার সকল টিম দুই ইউনিয়নের ৯টি চুরি হওয়া গরু উদ্ধার করার জন্য চেষ্টা করছি। আশা করছি খুব দ্রুত আসামীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারব। ২৬ জুন রাতে টহলকৃত পুলিশ সদস্য ও বিট অফিসারসহ দুই জন এসআই এবং ২ দুইজন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব অবহেলার কারনে পুলিশ সুপার মহোদয় থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেছেন।
মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ২ জুলাই ২০২৪।