সাটুরিয়া প্রতিনিধি, ১৭ জুন:
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় ধর্ষিতার লাথিতে ধর্ষকের মৃত্যু হয়েছে। পরে বিষয়টি আতœহত্যা চালিয়ে দিলেও মানিকগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ৬ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করে হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সামরুল হোসেন।
গত ১৫ জুন সাটুরিয়া উপজেলা দিঘুলিয়া ইউনিয়নের পূর্ব দিঘুলিয়া আয়নাল হকের কৃষি জমি থেকে টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার আউটপাড়া গ্রামের মৃত ফটিত আলির পুত্র লোকমান হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করে সাটুরিয়া থ থানা পুলিশ।
ঘটনার দিনই মানিকগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় আসামী আফরোজা বেগমকে আটক করে। পরে সে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, গত ১৫ জুন রাত আনমানিক ৯ পর মো. লোকমান হোসেন আফরোজা বেগমের বসতবাড়ির পেছনে চকের ভেতর (কৃষি জমি) পুকুর পাড়ে মেয়ের বিয়ের সমন্ধে কথা আছে বলে যেতে বলে। এসময় কথাবার্তার পর আফরোজা বেগমকে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য জোড় করে। আফরোজা বেগমের পরণের সেলোয়ার ছিঁড়ে ফেলে জোড় পূর্বক ধর্ষণ করে লোকমান। ধর্ষণ শেষে চলে যাওয়া পর আফরোজা বেগম মো. লোকমানের কাছে ১০০ টাকা দাবী করেন। লোকমান হোসেন তখন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আফরোজাকে। তখন আফরোজা উত্তেজিত হয়ে লোকমানের অন্ডকোষে সজোরে লাথি মারে। এসময় লোকমান হোসেন আহত হয়ে পরলে তাকে পরণের সেলোয়ার পুকুর থেকে ভিজিয়ে মাথায় দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আস্তে আস্তে লোকমানের নিথর দেহ নিস্তেজ হতে থাকে। ঘাতক আফরোজা ভয় পেয়ে লোকমানকে রেখে বাড়ি চলে আসে। আফরোজার ভেজা সেলোয়ারটি বসতবাড়ির পেছনে ফেলে দিয়ে আসেন। সেই সেলোয়ার পিবিআই উদ্ধার করেছে মামলার আলামত হিসেবে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সামরুল হোসেন বলেন, টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুরেরর আউটপাড়া গ্রামের লোকমান হোসেন কৃষি কাজ ও এলাকায় বিয়ের সমন্ধ নিয়ে ঘটকালি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। গত ১৪ জুন বিকেলে বাড়ির কাউকে কোন কিছু না জানিয়ে বের হন তিনি। পরেদিন ১৫ জুন তার মরদেহ পূর্ব দিঘুলিয়া আয়নাল হকের কৃষি জমিতে পরে আছে জানতে পারে তার ছেলে আব্দুল হাকিম। আতœীয়স্বজন নিয়ে লাশ শনাক্ত করেন তিনি। পরে পুলিশকে খবর দিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদর্ন্ত জন্য মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় মো. লোকমান হোসেনের ছেলে বাদী হয়ে সাটুরিয়া থানায় মামলা করেন।
মামলার বাদী আব্দুল হাকিম অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তিদের নামে মামলা করলে বিষয়টি মানিকগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তে নামে। পুলিশ ছায়া তদন্ত করে ১৫ জুন রাতে পাকুটিয়া গ্রামের মো. আলমাছ আলীর স্ত্রী আফরোজা বেগমকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
আফরোজা বেগমের তথ্যমতে মো. লোকমান হোসেন কৃষি কাজের পাশাপাশি এলাকায় বিবাহযোগ্য পাত্র পাত্রীর বিয়ের সম্পর্ন করতেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত তিনমাস আগে পরিচয় হয় তাদের মধ্যে। আফরোজার মেয়ে তনিমা আক্তার (১৪) সাথে বিয়ে ঠিক করে কথিত সুমন সাথে। এ সুযোগে তনিমা আক্তার ও সুমন মোবাইলে যোগাযোগ করতে থাকেন। এ বিষয়ে আফরোজা বেগম ও লোকমান হোসেনে সাথেও কথা হতো। এভাবে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
আফরোজা বেগম পুলিশকে আরো জানান, আমার মেয়ের বিয়ের সুযোগ নিয়ে সে আমার সাথে তিনমাস মোবাইলে কথা বলেছে। কথা বলতে বলতে সে আমার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। ওইদিন রাতে সে আমাকে পুকুর পাড়ে ঢেকে নিয়ে মেয়ের বিয়ের কথা বলে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে ধর্ষণ করেছে। এ কারণে আমি তাকে একটি লাথি মেরে ছিলাম। লাথিটি অন্ডকোষে লাগছে আমি বুজতে পারিনি। যখন দেখলাম সে আস্তে আস্তে নিস্তেজ হচ্ছে তখন তাকে বাঁচানোর জন্য চেস্টা করেছি। কিন্তুর অবস্থার বেগতিক দেখে তাকে ফেলে আমি বাড়ি চলে আসি। তবে লোকমান হোসেন ঘটকের কাজ করার নাম করে আরো অনেক নারীর ইজ্জত নষ্ট করেছে বলে দাবী এই গৃহবধূর।
সাটুরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) ইমাম আল মেহেদি বলেন, নিহত মো. লোকমান হোসেনের ছেলে আব্দুল হাকিম বাদী হয়ে সাটুরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেছে। মামলার প্রধান আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরো কেউ জরিত থাকলে তদন্ত করে বের হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ১৭ জুন ২০২৩।