শিবালয় প্রতিনিধি, ২১ মার্চ:
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী, শিক্ষিকাসহ ৩ জন নিহত হয়েছে। শিবালয়ে আব্দুল আলীম মেমোরিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থী জেরিন তাসমিন মীনা (৭) নামের ও ফাতেমা আক্তার (৩০) নামের এক শিক্ষিকা গাড়ি চাপায় নিহত হয়েছে। অপর ঘটনায় আশরাফ (৩৩) নামের এক আরেক যুবক নিহত হয়েছে।
সোমবার বেলা ১১ টার দিকে শিবালয় উপজেলার টেপড়া পিডিবি এলাকার স্কুল আঙ্গিনায় একটি দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত স্কুল ছাত্রী জেরিন শিবালয় সোনালী ব্যাংক শাখার ম্যানাজার শহিদুলের মেয়ে ও শিক্ষিকা ফাতেমা উপজেলার ভাকলা এলাকার আব্দুল আওয়ালের স্ত্রী।
এদিকে ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়কের আরপাড়ায় সড়ক মেরামতের সময় আশরাফ নামে আরেক ব্যাক্তি রোলারের চাপায় ঘটনা স্থলে নিহত হন।
আব্দুল আলীম মেমোরিয়াল স্কুলের পিয়ন বকুল বেগম বলেন, স্কুলের বাচ্চারা বিদ্যালয় ভবনের সামনে দাড়িয়ে ছিল। এসময় স্কুল চত্ত্বরের ভীতরে থাকা পিকাপ ভ্যান বের হবার সময় ২য় শ্রেণীর ছাত্রী জারিনকে ও শিক্ষাকা ফাতেমাকে চাপা দেয়। ঘটনা স্থলেই ওই শিশু মারা যায়। অপর দিকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে শিক্ষিকা নিহত হন। এ ঘটনায় আরো পাঁচ জন শিক্ষার্থী আহত হন।
নিহত ফাতেমার ননদ আঁখি আক্তার জানান, ফাতেমা আপা প্রতিদিনের মতই আজ তার ছোট ছেলে নাহিদকে নিয়ে স্কুলে যান। টিফিনের বিরতির সময় আমার ছেলে ও তার ছেলে স্কুল প্রাঙ্গনের ভিতরের দোকানে বিস্কুট কিনতে যায়। দোকানের সামনেই সেই পিকআপটি রাখা ছিল। ওই পিকআপ বের করার সময় তা নিয়ন্ত্রন হারিয়ে সোজা দোকানের উপর উঠিয়ে দেয়। ফাতেমা আপা ওই দোকানের পাশেই ছিলেন। আমার ছেলেকে বাঁচাতে গিয়েই তার উপরে দিয়ে পিকআপ উঠে যায়। আমার ছেলে বেঁচে ফিরলেও আপা আর বাঁচেনি।
ওই এলাকার রমজান হোসেন নামের এক অভিভাবক বলেন, ওই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রিন্সিপাল শহিদুল ইসলাম একজন লোভী প্রতির মানুষ। স্কুল যখন করোনার সময় বন্ধ ছিল তখন তিনি এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে দুইটি পিকআপ রাখার জন্য স্কুলের প্রাঙ্গনটি ভাড়া দেন। স্কুল খোলার পর শিক্ষক ও অভিভাবকরা এ বিষয়ে আপত্তি তুললে শহিদুল একটি গাড়ির জন্য জায়গা ভাড়া অব্যাহত রাখেন। তিনি অভিভাবকদের বলেন একটি গাড়ি রাখলে তেমন কোন সমস্যা হবে না। তাকে এ বিষয়ে বারবার বলার পরও তিনি কারো কথা আমলে নেননি। তার জন্যই আজ দুইজনের মৃত্যু হলো।
ফাতেমার স্বামী আওলাদ হোসেন জানান, সোমবার ওই প্রিন্সিপাল শহিদুল ও চালকের জন্য আমার সন্তানরা মা হারা হয়ে গেল। প্রিন্সিপাল যদি সবার কথা শুনতেন তাহলে আজ এই দিন আসতো না। আমি তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।
শিবালয় থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহিন সোমবার সন্ধা পোনে ৭ টার দিকে বলেন, দুর্ঘটনার পরে চালক পালিয়ে গেলেও ঘাতক ট্রাক জব্দ করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। পিকাপ ভ্যানটি সড়ক ও জনপথের কাজ করছিল। প্রতিষ্ঠানে নাম এনডিই ছাড়া আর কিছুই জানা যায় নি। গাড়িটি স্টার্ড দেওয়ার সময় সম্ভবত গিয়ারে দেওয়া ছিল। এতে চালক গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটায়। ঘটনা স্থলে ফোর্স পাঠানোর আগেই চালক, স্কুলের সকল শিক্ষক পালিয়ে গেছে। অপর দিকে শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া ঘাটের অদুরে আরপাড়া এলাকায় সড়ক মেরামতের সময় রোলারের চাপায় ঘটনায় আশরাফ নামের একজন নিহত হয়।
শিবালয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম ফারুক বলেন, ঘটনার আগে আমরা জানতাম না। বিদ্যালয় আঙ্গিনায় গ্যারেজ ছিল। কোন ভাবে বিদ্যালয় চত্তরে গ্যারেজ থাকতে পারে না। বিষয়টি আমার উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট কথা বলে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহিদুর রহমান বলেন, বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ছাত্রীসহ শিক্ষক নিহতের ঘটনায় আমি একটি লিখিত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট জমা দিয়েছি।
মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ২১ মার্চ ২০২২।