নাসরিন সুলতানা ঐশী, ৪ নভেম্বর:
আসসালামুআলাইকুম। দেখতে দেখতে ডিজিটাল সেন্টারের ১০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। আমার শিমুলিয়া ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের পক্ষ থেকে পুরাতন সকল উদ্যোক্তাদের অভিনন্দন এবং নতুনদের স্বাগত জানাচ্ছি। দীর্ঘ সময়ের শারিরীক অসুস্থতা ও পরীক্ষার জনীত কারনে অনেক কিছু মিস করেছি। মুজিব বর্ষের ক্যাম্পেইনে তেমন ভাবে অংশগ্রহন মূলক প্রচার করতে পারি নি। আশাকরি আগামীকাল থেকে টানা ১ মাস চলবে আমাদের ক্যাম্পেইন সকলেই আমন্ত্রিত। আজ উদ্যোক্তা হিসাবে আমার অভিজ্ঞতা শেষার করছি আপনাদের সাথে।
নাসরিন সুলতানা ঐশী,উদ্যোক্তা , শিমুলিয়া ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা।
ডিজিটাল সেন্টারের (পূর্বের ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের) সাথে যুক্ত হয়েছিলাম ২০১১ সালের শেষের দিকে। দীর্ঘ ৯ বছরের সম্পর্ক এই ডিজিটাল সেন্টার পরিবারের সাথে। শিক্ষা, প্রাপ্তি অনুপ্রেরনা, ভালোবাসা সবই পেয়েছি এখান থেকে। আর সবচেয়ে বড় শিক্ষা পেয়েছি কখনো “আমি পেরেছি- সফল হয়েছি স্যার। আচ্ছা অনেক ভালো অনেক অনেক অভিনন্দন আপনাকে। কিভাবে পেরেছেন, তার জন্য কি কি করতে হয়েছে আপনাকে, আপনার সফলতার গল্পটা শুনান আমাদের সবাইকে। যাতে আরো অনেকেই সফল হতে পারে”।
একজন নারী উদ্যোক্তা হিসাবে দীর্ঘ সময়ের এই পথচলাতে অনেক চড়াই-ওত্রাই পার করেছি জীবনে। অনেকের মুখ থেকেই শুনেছি- তুমি তো মেয়ে মানুষ তারপর আবার অনেক ছোট,এতো কিছু করার কি দরকার তাছাড়া তুমি কি পারবে ছেলেদের সাথে সমান কদমে চলতে। উত্তর একটাই ছিলো- চেষ্টা করে দেখি। তবে মনে মনে ইচ্ছা ছিলো সমান কদম নয় আমার আরো এগিয়ে যেতে হবে।
২০১৩ সালের দিকে আমার ডিজিটাল সেন্টারের পুরুষ উদ্যোক্তা অন্যত্র চলে যায় ফলে সমস্ত দ্বায়িত্ব আমার কাঁধে এসে পরে। তখনও একই কথা শুনতে হয়েছে তুমি পারবে কি? আয় কম হওয়ার কারনে তেমন কাউকে না পাওয়ায় একাই শুরু করি। ৬ মাস পর থেকে অদ্যাবধি আমার জীবনে বহুল পরিচিত বাক্য “তুমি পারবে কি” খুব কমবারই শুনেছি। এখন একটাই কথা বেশী শুনি কিভাবে করা সম্ভব।
আমার ইউপিতে ভবন না থাকার কারনে আমার ডিজিটাল সেন্টারটি ঐইরকম আকর্ষনী নয়। কিন্তু শুরু থেকে ইউনিয়ন পরিষদের সমস্ত কার্যক্রম ডিজিটাল সেন্টারকেন্দ্রিক ও ইউনিয়নের মধ্যবর্তী অবস্থানে হওয়াতে বাহিরে সেন্টার নেওয়া হয় নি। কর্মপরিধি বৃদ্ধি পাওয়াতে ২০১৫ সাল থেকে আরো একজন পুরুষ ও একজন নারী উদ্যোক্তার সমন্বয়ে বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে আমার ডিজিটাল সেন্টারের কার্যক্রম।
প্রায় ৩ লক্ষ জনসংখ্যার আমাদের এই ডিজিটাল সেন্টারে ৩ জনে অনলাইন অফলাইন মিলে গড়ে ১৫০-২০০ মানুষকে প্রতিদিন সেবা দিয়ে থাকি। মাসিক গড় মুনাফা প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকা আসে।
আমার কাছে উদ্যোক্তা মানে:
(১) কোন কাজে সফল হতে পারি না, সমস্যা নাই, কেন হতে পারি নাই, কি কি করার দরকার ছিলো তার বের করা এবং সবকিছু শুধরিয়ে সেখানে না থেমে নতুন কোন কিছু করা। প্রথম বারের চেষ্টায় সফলতা খুব কমসংখ্যক মানুষ ই পায়। কিন্তু চেষ্টা করতে তো আর দোষ নেই।
(২) আমি যে কাজ করি সেটা আর অনেকেই করে তাতে কি হয়েছে। প্রতিযোগীতা থাকা মানে হচ্ছে কাজের মান ভালো হওয়া। আমি সবার সাথে প্রতিযোগিতা করে আমার ব্যবস্যাকে সবার কাছে রোল মডেল হিসাবে কিভাবে উপস্থাপন করতে পারি সেটা চেষ্টা করা।
(৩) নতুনত্বকে স্বাগত জানানো এবং পুরাতনকে নতুনরুপে উপস্থাপন করা। সময়ের সাথে নিজেকে খাপখায়িয়ে নেওয়া।
(৪) ধৈর্য্য এবং কিছু করার মনমানসিকতা এবং তার জন্য নিজের শতভাগ ডেডিকেশন ।
সবাই যার যার অবস্থান থেকে নিজের স্বপ্ন পূরনের সর্বাত্তক চেষ্টা করি। আমার এই পথচলাতে যারা আমার পথপদর্শক হয়েছেন সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এবং যারা নতুন কিছু করার উৎসাহ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, পাশে থেকেছেন সবসময় সবার প্রতি অনেক অনেক ভালোবাসা। (ভাষাজনীত ত্রুটি মার্জনীয়)।
নাসরিন সুলতানা ঐশী ফেসবুক থেকে নেওয়া।
উদ্যোক্তা , শিমুলিয়া ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা।
মানিকগঞ্জ২৪/ ৪ নভেম্বর ২০২০।