মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি, ৩১ অক্টোবর:
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া এলাকায় বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে হামলা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ভাংচুরের ঘটনায় আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
গত ১৬ অক্টোবর বিকেলে ভাড়ারিয়ার মালেকার মোড় এলাকায় হামলায় আহত আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী মুশের্দা আক্তার বাদী হয়ে ২৩ জনকে আসামী করে মানিকগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। আদালত মানিকগঞ্জ সদর থানা পুলিশকে ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ অক্টোবর বিকাল ৫টার দিকে হরিরামপুর উপজেলার বলড়া এলাকার আনোয়ার হোসেন তার বন্ধু মো. রনির বাড়িতে দেখা করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের মালেকার মোড় এলাকায় তাদের দেখা হয়। এসময় মালেকার মোড় এলাকায় পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা এলাকার ত্রাস ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য মো. সোহাগ, মো. ইছুব, ইদ্রিস,সুমন, কাউসার মাহাকী, হাসান, সাকিব, মো. রাজা, আকাশ, মো. রাকিব হোসেন, মো. সজিব, মেহেদীসহ ২২-২৩জন দূর্বৃত্ত ধারালো দা, চাপাতি, ছ্যান, চাইনিজ কুড়াল, লোহার রড, কাঠের বাতাম, হাতুড়ী, গ্যাস পাইপ দিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়।
এসময় আনোয়ার হোসেন ও রনি তাদের বাঁধা দিতে গেলে উভয় গ্রুপের সদস্যরা হামলায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সোহাগ চাপাতি দিয়ে আনোয়ার হোসেনকে কোপ দিলে তার বাম কাঁধের নিচে ও পিঠের বাম পাশে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়।
পরে অন্যান্য আসামীগণও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তার ওপর হামলা করে মারাত্নক আহত করে। এসময় আনোয়ার হোসেনকে বাঁচানোর জন্য তার বন্ধু মো. রনি এগিয়ে গেলে আসামী হাসান, ইউছুব, সুমন, সাকিব লোহার রড, গ্যাস পাইপ ও হাতুড়ী দিয়ে আঘাত করলে তার পিঠ, বাম পায়ের হাটুর নিচে ও শরীরে মারাত্নক আহত হয়। এসময় আনোয়ার হোসেনের পকেটে থাকা ৩০ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
পরে একইদিন সন্ধ্যায় উক্ত আসামীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বলড়া বাজারের চৌধুরী ফার্মেসীতে গিয়ে হামলা চালায়।
এসময় চৌধুরী ফার্মেসীর মালিক আনোয়ার হোসেনের মামাতো ভাই ডা. সালাম চৌধুরীকে না পেয়ে আসামীরা ফার্মেসীতে সংরক্ষিত ওষুধের সু-কেচ, আলমারী ও আলমারীর কাচ ভাঙ্গে এবং লাল রংয়ের একটি পালসার মোটরসাইকেলে হামলা চালিয়ে দুই লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করে।
পরে আহত আনোয়ার হোসেন ও মো. রনি স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করতে গেলে আসামী মো. ইউছুব পুলিশ দিয়ে ওই দুইজনসহ মোট পাচজনকে পুলিশ দিয়ে আটক করায়। পরে পুলিশ হেফাজতে আনোয়ার হোসেন ও মো. রনি চিকিৎসা গ্রহণ করে। পরে এ ঘটনায় ১১জনকে আসামী করে ইউসুব বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। সে মামলায় ৮জন আসামী জামিনে রয়েছেন। অপরদিকে হামলায় মারাত্নক আহত আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী মুর্শেদা আক্তার থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে মামলার বাদী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী মুর্শেদা আক্তার জানান, আমার স্বামী আনোয়ার হোসেন ও তার বন্ধু রনিসহ আরও কয়েকজনকে সন্ত্রাসী সোহাগ গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে মারাত্নক আহত করেছে।
আবার তারাই আগে পুলিশ এনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার স্বামীর লোকজনকে আটক করে নিয়ে থানায় মামলা দিয়েছে। আমি একটু দেরিতে মানিকগঞ্জ সদর থানায় মামলা করতে গেলে থানায় মামলা না করে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন পুলিশ। পরে আমি বাদী হয়ে ২২ অক্টোবর ২৩জনকে আসামী করে মানিকগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছি। মামলা নং ৯৭০। মামলা হবার পর আদালতের বিচারক সদর
থানায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। মামলা করার এক সপ্তাহ হলেও থানা
পুলিশের কার্যকরী কোন পদক্ষেপ দেখছি না।
মানিকগঞ্জ সদর থানা ওসি এসএম আমানউল্লাহ বলেন, বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় ইউসুব বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। সে মামলায় পাঁচজনকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছিলো। অপরদিকে আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী বাদী হয়ে আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। সে মামলাটির তদন্ত করে প্রতিবেদন আদালতে পাঠানো হবে।
মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ৩১ অক্টোবর ২০২৪।