মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি, ১৪ সেপ্টেম্বর:
মানিকগঞ্জে দুদফার বন্যার পানিতে ভাসছে লেবু চাষীদের স্বপ্ন। লেবু চাষী ও বেপারী হাজার হাজার লেবু গাছ বন্যার পানিতে মরে গেছে। আবার পানি জমে থাকায় লেবু পাকলেও ছিড়তে পারছেন না। এতে মানিকগঞ্জের অন্যন্য কৃষকদের মত লেবু চাষীরা মারাত্বক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসাণ অধিদপ্তরের উপ- সহাকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বলেন, জেলার সাটুরিয়া ও ঘিওর উপজেলায় সবে চেয়ে বেশী বাণিজ্যিক ভাবে লেবু চাষ করে থাকে। তাছাড়া অন্যান্য সিংগাইর, হরিরামপুর, দৌলতপুর, শিবালয় ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় তুলনা মূলক কম লেবু চাষ হয়ে থাকে। জেলার ৭টি উপজেলায় ১৯০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়ে থাকে।
সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো. খলিলুর রহমান বলেন, শুধু মাত্র সাটুরিয়া উপজেলায় ৯০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করে থাকে। এর মধ্যে সাটুরিয়া ইউনিয়নের শেখরিনগর বাছট, বৈলতুলা, কন্দর্পপুর গ্রামেই কমপক্ষে ৫ শতাধিক লেবু চাষী রয়েছে।
সাটুরিয়া উপজেলার বাছট, শেখরিনগর, বৈলতুলা, কন্দর্পপুর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানি নেমে গেলেও বিভিন্ন লেবু খেতে পানি আটকে আছে। লেবু থুকায় থুকায় পেকে যাচ্ছে। কিন্তু পানির কারনে লেবু ছিড়তে পারছেন না।
শেখরিনগর গ্রামের লেবু চাষী ইব্রাহিম বলেন, লেবু চাষে খরচ কম। তাই আমাদের অঞ্চলের অন্যতম প্রধান ফষল হচ্ছে লেবু। ৩০ শতাংশ জমিতে ২৫০-৩০০ টি লেবুর চারা রোপণ করে থাকি। রোপণ করার ১২-১৪ মাসের মধ্যেই লেবু বিক্রি করা যায়। বছরে ৩- ৪ বার বাগান পরিস্কার ও পরিচযা করতে হয়। ৩০ শতাংশ লেবু বাগান এক বছরের জন্য পাইকারদের নিকট বিক্রি করলে ২৫- ৩০ হাজার টাকা বিক্রি কর যায়। এতে আমাদের ২ টাকাও খচর করতে হয় না।
কন্দর্পপুর গ্রামের লেবু চাষী সাজাহান আলী বলেন, ১৫০ শতাংশ জমিতে লেবু চাষ করেছি। আমি নিজেই লেবু উঠিয়ে ঢাকার বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করি। বন্যার কারনে আমার অধিকাংশ লেবুর চারা মরে যাচ্ছে। এতে আমার এক লক্ষ টাকার লেবু নষ্ট হয়ে গেছে।
একই গ্রামের দুলাল মিয়া বলেন, আমার নিজের ৩৫ শতাংশ জমির লেবু ও এক বছরের জন্য কিনছি ৫০ শতাং জমির লেবু। বন্যার পানি নামতে ছে না ক্ষেত থেকে। সব লেবু পাইকা যাইতাছে কিন্ত বিক্রি করতে পারছি না।
বাছট গ্রামের লেবু চাষী খলিলুর রহমান বলেন, করোনার কারনে মার্চ ও এপ্রিল মাসে লেবুর দাম পাইছিলাম। কিন্তু তহন লেবু কম উঠত। এহন লেবুর দাম কইমা গেছে। এমনিতেই বন্যার কারনে লেবু গাছ মইরা গেছে। গত সপ্তাহে আমি খাচি লেবু ঢাকায় পাঠাইছি। সব খরচ দিয়া আমার আরও ৬০ টাকা লচ হইছে।
লেবুর বেপারী মোশারফ বলেন, আমার কোন খেত নাই। এক ছররের জন্য লেবু খেত কিনি। এ বছর আমি ৭ লক্ষ টাকার ক্ষেত কিনছি। বছরে ৩ বার সার, শ্রমিক খরচ দিয়া আমার আরও ৩ লাখ টাকা গেছে। শুধু মাত্র বন্যার কারনে আমার ৪ লক্ষ টাকার লচ হইছে।
বাছট গ্রামের আরেক বেপারী হানিফ আলী বলেন, এ বছর আমি ৯ শত শতাংশ জমিতে বাৎসরিক চুক্তিতে লেবু খেত কিনছিলাম। আমার অধিকাংশ জমির লেবু গাছ বন্যার পানিতে মইরা গেছে। কৃষকদের সব টাকা আগেই দিয়া দিছি। তারা আমাগ টাকা ফেরত দিব। নিজের কিছু ছিল আর দেনা কইরা কিনছিলাম। আমার সব মিলা সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা লচ হইব। আমি এখন খাব কি আর সুদ দিব কই থেকে।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক মো. শাজাহান আলী বিশ্বাস বলেন, আমার জেলায় ২ হাজার ৭শত ৩০ মেট্রিক টন লেবু উৎপাদন হয়েছিল। অন্যান্য চাষীদের মত লেবু চাষীরাও মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা ক্ষতি হবার ত হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও এখনও অনেক লেবু খেতে পানি আটকে গিয়েছে। এসব পানি দ্রুত না নামলে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা আছে। বিভিন্ন সময়ে তাদের সহযোগীতা করা হবে।
মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০।