মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি, ৩০ জুলাই:
কুরবানির ঈদের বাকী মাত্র একদিন। কিন্তু এ মৌসুমে তেমন কোন কাজ ছিল না কামারদের। সারা বছরের চেয়ে এই সময়ে বেচা কেনা বেড়ে যায়। কিন্তু কুরবানির আগের দিনও মানিকগঞ্জের কামারদের তেমন কোন ব্যাস্ততা নেই ।
প্রতিবছর ঈদের ১৫ দিন আগে থেকে চাপাতি ও ছুরি বানাতে ঘাম জড়াতে হয় কামারদের। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে মার্চ থেকে বিয়েসহ সকল সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে বন্ধ থাকায় কাজ নেই বল্লেই চলে। আশা ছিল হয়ত কুরবানির ঈদের আগে বেচা কেনা হবে। কিন্ত এ বছর তাও হলনা।
মানিকগঞ্জের ওয়ারলেস পার দিয়ে দেখা যায় কামারদের তেমন কোন কর্মব্যাস্ততা নেই। সারাদিন কোন কাজ না থাকায় অনেক কামার বসে আছে। আবার কেউ ঘুমাচ্ছেন।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার আটিগ্রামের গকুল কর্মকার বলেন, ৪০ বছর ধরে এ পেশার সাথে আছি। এত মন্ধা দেখি নেই জীবনে। ঈদ আসছে তাই ৪টি চাপাতি বানাইছি ৫ দিন আগে। এহন পযন্ত কেউ আইসা দামই কয় নাই।
সুভল কর্মকার বলেন, করোনা ভাইরাসের কারনে মার্চ থেকে টানা বন্ধ ছিল আমাদের কাম। লকডাউন উঠে যাওয়ার পরও কাম ছিল না। ক্যামেনে কাম পামু কন ? বিয়েসাদিসহ হগল কিছুই অইবার দেয় না । তাই আমাগ বেচা কেনা বন্ধ। ভাবছিলাম ঈদ আয়লে কাম অয়ব। গেল বছর প্রতিদিন ৪-৫টি চাপাতি ও ১০-১৫ টি ছুরি বেচছি।
ঈদুল আযহা আসলেই প্রতিবছর কামারদের ব্যস্ততা বেড়ে যেত। দা, বটি, চাপাতি, ছুরি বানাতে দিন রাত ঘাম ঝরত। জেলার বিভিন্ন কামারপট্টি ও হাট-বাজার এখন টুং টাং শব্দে মুখরিত থাকত। পশু জবাই করা, মাংস কাটা ও চামড়া ছাড়ানোর জন্য প্রয়োজন হয় চাকু, চাপাতি, বঁটি, দাসহ নানা ধরনের উপকরণের কদর বেড়ে যোত কোরবানির আগের এসময় গুলিতে। মানিকগঞ্জে হাজার হাজার পশু জবাই করা হয়। আর তাই কোরবানির আগমুহূর্তে কামারের দোকানে ছোটতেন কোরবানিদাতারা। কিন্তু করোনা ভাইরাস সব হিসাব পাল্টে দিছে।
মানিকগঞ্জে সব ধরনের চাপাতি ৬০০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হয়। একটি চাপাতি দেড়- দুই কেজির ওজন হয়ে থাকে। আর পশুর চামরা ছাড়ানোর চাকু ও ছুড়ি বিক্রি হয় বিভিন্ন প্রকার ভেদে ২০০- ৫০০ টাকা পযন্ত।
মানিকগঞ্জ সদরের দিলিপ কর্মকার বলেন, লোহার দাম না বাড়লেও কয়লাম দাম বেড়েছে। আগে এক বস্তা পাথর কয়লা কিনতাম ৬০০ টাকা, সেই কয়লা এখন দাম ২ হাজার টাকা। তাও পাওয়া যাচ্ছে না। বাদ্য হয়ে ইন্ডিয়ান কয়লা কিনতে হয়। তার পরও যদি বেচা কেনা না থাকে তাহলে কিভাবে কাম করব।
তারা মিয়া বলেন, আমি এখানে রোজ হিসেবে ৬০০ টাকা কাজ করছি ৩০ বছর ধরে। বেচা কেনা নাই বল্লেই চলে। বর্তমানে আমারা দা, বটি ও কুদাল বানিয়ে কোন রকম কাজ করছি। ঈদের আগে আমাদের কাজ বাড়লেও এ বছর কাষ্টমারই নাই।
অনেকেই পশু কিনেন নাই। বৃহস্পতিবার কিছু চাপাতি ও ছুরি বিক্রি হতে পারে বলে এমনটাই আশা করছেন এখানকার কামাররা।
মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ৩০ জুলাই ২০২০।