শফি উদ্দিন আহমেদ, ৩১ অক্টোবর
ইছামতি নদীঃ
মানিকগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান ইছামতি নদী অন্যতম প্রাচীন নদী। যুগে যুগে পদ্মা, ধলেশ্বরী, যমুনা প্রভৃতি বড় বড় নদ-নদীর খাত পরিবর্তন এবং ব্যাপক ভাঙাচোড়ার ফলে এলাকার ভূগঠনে যে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে তাতে ইছামতি নদীর আদি খাত এবং তার উৎস মুখ খুজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
ইছামতির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে একাধিক বার। শুধু তাই নয় বড় বড় নদ-নদীগুলো ইছামতির স্বাভাবিক প্রবাহকে গ্রাস করে মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে অনেকবার। ফলে ইছামতির উৎস মুখ থেকে শেষ অবধি পর্যন্ত মূল খাতের ধারাবাহিকতা খুঁজে পাওয়া দুরহ ব্যাপার। তবে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন জেলায় ইছামতির খন্ডিত ও বিচ্ছিন্ন প্রবাহ এখনও ক্ষীণভাবে হলেও লক্ষ্য করা যায়।
মনে করা হয় বারভূইয়া নেতা ঈসা খাঁ মসনদ-ই-আলার নামানুসারেই ইছামতি নদীর নামকরণ হয়েছে। নিরাপদ এবং সংপ্তি যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজনেই তিনি এ খাল খনন করেছিলেন এবং পরে তা নদীর প্রবাহে রূপ নেয়। অথবা এমনও হতে পারে যে সরল জলপ্রবাহটি ঈসা খাঁ নিয়মিত ব্যবহার করতেন তা পরে ইছামতি নদী নামে পরিচিতি লাভ করে।
অনেকে মনে করেন অতীতে করতোয়া এবং হোরা সাগরের সম্মিলিত সাগরগামিনী স্রোতধারাই আজকের ইছামতি নদী। উল্লেখ্য, করতোয়া এবং হোরা সাগরের প্রবাহ অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে মানিকগঞ্জ জেলার জাফরগঞ্জের নিকট একত্রে গঙ্গীয় পদ্মার স্রোতধারায় মিলিত হয়।
আবার কেউ কেউ মনে করেন রাজশাহীর দক্ষিণ পূর্বে এবং উত্তর পশ্চিম কোণে পদ্মা বা গঙ্গার স্রোতধারার মাথাভাঙ্গাতে ইছামতির উৎপত্তি এবং তা দক্ষিণগামী হয়ে বনগ্রাম, বসিরহাট এবং বেয়র বিলের নিকট প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
কাপিল ভট্টাচার্য বাংলাদেশের নদ-নদী এবং পরিকল্পনা গ্রন্থে লিখেছেন, ইছামতির নামে মাত্র উৎস মাথাভাঙ্গা নদীতে। যমুনার খাতটি ইছামতির সঙ্গে গিয়ে মিশেছে। মুখ্যতঃ জোয়ারের জলের উপর নির্ভর করে ইছামতি বেঁচে আছে।
মেজর রেনেলের মানচিত্রানুযায়ী (১৭৭৮ সনে প্রকাশিত) মানিকগঞ্জে ইছামতি নদীর উৎসমুখ ছিল জাফরগঞ্জের কাছাকাছি। সে সময় পদ্মা তীরবর্তী বিখ্যাত এলাচিপুরের নিকট থেকে উৎসারিত দুটি স্রোতধারা ল্য করা যায়। তার একটি নওয়াবখালী গ্রীক নামে মোটাপাড়ার নিকট পদ্মার মিলিত এবং অপর শাখাটি ধলেশ্বরী থেকে আগত একটি প্রবাহের সঙ্গে খাবাসখালীর নিকট ইছামতিতে মিলিত হতো। ” The Ichamoti is a dead river and its course has not varied materially in the last 150 years, probably an older course of the Gangs. Its course lies nearly due west and east and is an ridiction of what may be the ultimately direction of the Padma. “।
সপ্তদশ শতকে সম্রাট আকবর এবং জাহাঙ্গীরের রাজাঙ্কে ইছামতি নদীর প্রবাহ যে গতিপথে বাহিত হতো এবং অন্যান্য সমস্ত শাখা প্রশাখা নাব্য ছিল এবং যে খাত বাংলার বার ভূইয়া ও মোগলগণ ব্যবহার করেছেন আজকের প্রবাহমান ইছামতির খাত তার চেয়ে নিঃসন্দেহে ভিন্নতর।
মানিকগঞ্জে এখন ইছামতি নদী ঘিওর উপজেলা সদরের পশ্চিমে কুস্তার নিকট প্রাচীন ধলেশ্বরীর খাত থেকে উৎসারিত হয়ে রসুলপুরের নিকট দিয়ে দক্ষিণ পশ্চিমে প্রবাহিত। অতঃপর তা সসিনারা ও গোয়ালন্দের মধ্য দিয়ে শিবালয় উপজেলায় প্রবেশ করেছে এবং পাইপাড়া, চারিপাড়া, হরিরামপুর, ধুতরাবাড়ী, রূপসা, নীলগ্রাম, ত্রিলোচনপট্টি, বিলভরিত, চর বারুরিয়া, কোদালিয়া, ধিতপুর ও উত্তর সৌলজানার মধ্য দিয়ে হরিরামপুর উপজেলায় প্রবেশ করেছে। তারপর নদীটি মাচাইন, জগতবের, বাল্লা, কালিকাপুর, বাহির চর, আন্ধারমানিক, পাঠানকান্দি, হরিরামপুর, কুমারডাহা, বাহির চর, আন্ধার মানিক, রাজারা, পশ্চিম খলিলপুর, থানা যাত্রাপুর, পিপুলিয়া, বলরা, টানটুরখোলা, চর বংখুরি এবং বরঘোনার নিকট প্রবাহিত হয়ে নওয়াবগঞ্জ উপজেলায় প্রবেশ করতঃ বিভিন্ন নগর জনপদ স্পর্শ করে ধলেশ্বরীর মূল প্রবাহে মিলেছে।
ইছামতির একাধিক শাখা প্রশাখা হরিরামপুর উপজেলার মধ্যে প্রবাহমান ছিল। একটি প্রবাহ কামারকান্দি এবং চৌকাঘাটের মধ্যবর্তী ইছামতির খাত থেকে উত্তর পূর্ব দিয়ে তৎপর দণিগামী হয়ে হারুকান্দি, ভাটিকান্দি, রামচানপুর, লক্ষ্মীকুলের নিকট নিকট পূর্ব দিকে মোড় নিয়েছে। অতপর তা আজিমনগরের নিকট দণিগামী হয়ে সৈয়দনগরের পাশ ঘেষে মির্জাপুরের নিকট পদ্মায় মিশেছে। এ শাখা খাতটি ইছামতির প্রাচীন প্রবাহের সঙ্গে যুক্ত ছিল, ঊনিশ শতকের মাঝামাঝিতে পদ্মার প্রবাহ উত্তর পূর্বে সরে এসে মির্জাপুরের নিকট ইছামতির প্রবাহকে গ্রাস করে এবং বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
যাহোক ১৯০১-০২ সনের সার্ভে মানচিত্রে উক্ত খাতের বহতা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ১৯১০-১৪ সনের জরীপ মানচিত্রে এ প্রবাহটি বিচ্ছিন্ন এবং অত্যন্তরীণ নাব্য দেখানো হয়েছে। তার পরবর্তী সময়ে তা সম্পূর্ণ মজে গিয়ে সমভূমি ও আবাদী জমিতে পরিণত হয়েছে।
দ্বিতীয় শাখাটি রাজরার নিকট থেকে বেরিয়ে দণি পূর্বে এসে ভালাবাদ, ইন্দ্রপাড়া, নাঙ্গলহাটা, পেরনীজ, হাজিপুর, বাইলাঘোপা এবং রঘুনাথপুরের মধ্য দিয়ে পূর্বোক্ত প্রবাহের সঙ্গে মিলেছে। হরিরামপুর উপজেলা সদরের নিকট ইছামতি থেকে অন্য একটি প্রবাহ পূর্বগামী হয়ে সুতালরীর দক্ষিণ দিয়ে দ্বিতীয় প্রবাহে মিলেছে। মানিকনগরের নিকট থেকে একটি প্রবাহ দণিগামী হয়ে ছত্রজিৎপুর, রঘুনাথপুর এবং জয়পুরের নিকট প্রবাহিত হয়ে পদ্মার ধারায় পতিত হতো, পরিত্যক্ত উক্ত প্রবাহটি এখন ডালমারার বিল নামে পরিচিত।
ঐতিহাসিক মাচাইন গ্রামের নিকট থেকে ইছামতির মূল স্রোতধারা থেকে একটি প্রবাহ উত্তর পূর্ব দিকে ছোট শাকরাইল, ইসাখাবাদ, টেটামারা, গাছএলতা, বাঙালার উত্তর ও হেলাচিলার দণি প্রান্ত থেকে বরুণা, বারথা, বাঘিয়া, বরুন্ডি, জামশার নিকট দিয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলায় প্রবেশ করেছে। বর্তমান কালীগঙ্গা ইছামতির প্রাচীন শাখা খাতের প্রবাহ অনেকটাই গ্রাস করেছে। বিখ্যাত বন্দর কালিকাপুরের নিকট থেকে ইছামতির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবাহ গোপালপুর যাত্রাপুরের নিকট দিয়ে হেলাচিয়ার দেিণ ইছামতির অপর শাখা খাতের সঙ্গে যোগাযোগ রা করতো। এ প্রবাহটি ইছামতির প্রাচীন প্রবাহের সঙ্গে অভিন্ন। ঐতিহাসিক যাত্রাপুর এর তীরেই অবস্থিত। পরবর্তীতে এ মূল প্রবাহটি ক্ষীণ শাখা খাতে রূপ লাভ করে এবং মূল প্রবাহ সম্ভবত দক্ষিণে সরে যায়।
বহু শতাব্দীর ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত ইছামতি নদী বর্তমানে শুষ্কপ্রায়, চলাচলের অনুপযোগী এবং একটি বর্ষাকালীন ধারামাত্র। হরিরামপুর উপজেলার মধ্যে প্রবাহমান ইছামতির তীর ভূমি থেকে পদ্মার প্রবাহ ১০/১২ মাইল দূরত্বে অবস্থিত ছিল। কিন্তু বর্তমান শতাব্দীতে পদ্মার প্রবাহ হরিরামপুরের অনেক অভ্যন্তর ভাগে প্রবেশ করে ইছামতির প্রবাহকে বুকে ধারণ করে নিয়েছে। ফলে বিগত ১৯৭০ এর দশকে ইছামতির পুরানো এবং নির্ধারিত গতি পথ ছিল তা দ্বিখন্ডিত হয়ে যায়। হরিরামপুরের দণি পূর্বাংশের ইছামতির প্রবাহ এখন পদ্মার জলরাশিতে এবং পশ্চিমাংশ প্রাচীন ধলেশ্বরীর জলরাশিতে পুষ্ট।
কান্তাবতী নদীঃ কান্তাবতী নদীর খাত পুরানো। যমুনার প্রবাহ জাফরগঞ্জের নিকট পদ্মার স্রোত ধারার সঙ্গে মিলিত হওয়ার পূর্বে কান্তাবতী সম্ভবত হোরা সাগর নদীর শাখা খাত ছিল। যমুনার বিশাল প্রবাহ হোরা সাগর নদীর প্রবাহ গ্রাস করলে কান্তাবতী যমুনার জলধারায় পুষ্ট হয়। যমুনার যে শাখা খাত ঊনিশ শতকের অষ্টম দশকে কোয়ের নিকট দিয়ে দক্ষিণগামী হয়ে বাসাইল, নৈহাটি, রঘুনাথপুর, তেওতা টিকোর সাইটঘর, নারায়ণপুর এবং ঝিকুটিয়ার পশ্চিম পার্শ্ব বেয়ে পদ্মার স্রোত ধারায় পতিত তার মধ্যবর্তী স্থানে নৈহাটির নিকট কান্তাবতী নদীর উৎসমুখ লক্ষ্য করা যায়। কান্তাবতী নদীর নাম সম্পর্কে একটি কিংবদন্তী শোনা যায়। কান্তাবতীর তীরেই রানী নগরের অবস্থান। এটাই ছিল মানিকগঞ্জের বিখ্যাত বার ভূইয়ার অন্যতম খলসীর মধুরায়ের দুর্গনগরী। সম্রাট আকবরের রাজত্বকালের শেষে মোগলগণ মধুরায়কে তার জমিদারী থেকে উৎখাত করলে তিনি ঈসা খানের মৃত্যুর পর মুসা খানের ছত্রছায়ায় আশ্রয় নেন। সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে যুদ্ধ হয় তাতে মধুরায় আহত এবং পুত্র নিহত হন। এ মর্মান্তিক মৃত্যু সংবাদ মধুরায়ের দুর্গনগরীর প্রাসাদে অবস্থানরত পুত্রবধূ রানী কান্তাবতীর নিকট পৌছলে তিনি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সেই থেকে নদীর নাম হলো কান্তাবতী এবং দুর্গনগরী হলো রানীনগর।
কান্তাবতী নদী নৈহাটির নিকট থেকে দণি পূর্বগামী হয়ে চর পোয়াইল, ধুমসর, রানীনগরের নিকট ঘেষে বড়দিয়ার কাছে ইছামতির স্রোতধারায় মিলেছে। কিন্তু পূর্বে এ নদীর বহতা আরো নিম্নগামী ছিল। কারণ কলতা, গাছ কলতার নিকট শুষ্ক প্রায় সে খাতটি এখনও ল্য করা যায় তাও কান্তাবতী নামে খ্যাত। অসম্ভব কিছু নয় কান্তাবতীর নিম্নগামী প্রবাহটি সম্পূর্ণ পলিস্তর জমে সমভূমিতে রূপান্তরিত হয়েছে অথবা তা ইছামতি, মন্দা ও রিাই নদীর প্রবাহে বিচ্ছিন্ন এবং বিলীন হয়ে গেছে।
মনলোকহালী নদী : যমুনার শাখা খাত এলেঙ্গাজানী নদীটি সাটুরিয়া উপজেলা সীমান্তের উত্তরে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়। এর একটি প্রবাহ Khoerec এবং সাভারের নিকট বেয়ে মনলোকহালী নামে সাটুরিয়া উপজেলায় প্রবেশ করেছে। অতঃপর তা বরাঈদ ও কাজলখুরিয়ার মধ্য দিয়ে বিলতালুক ও কুষ্টিয়ার নিকট ধলেশ্বরীতে মিলেছে। অপর শাখাটি বালিয়াটির উত্তর ও পূর্বসীমা বেয়ে নান্দাশুরীর নিকট ধলেশ্বরীতে যুক্ত হয়েছে। মনলোকহালী নদীর খাতেই পরবর্তীতে ধলেশ্বরীর প্রধান প্রবাহ বাহিত হয়েছিল।
গাজীখালি নদী:
এটি ধলেশ্বরীর অন্যতম প্রধান শাখা নদী। ভাওয়ালের বিখ্যাত গাজীদের নামানুষারেই সম্ভবতঃ এ নদীর নামকরণ হয়ে থাকবে গাজীখালি। গাজীখালি সাটুরিয়া উপজেলার সাটুরিয়ার নিকট ধলেশ্বরী থেকে বের হয়ে পূর্ব দেিণ বারবুন, বাসুট, গাউলা, কর্ণপাড়া ও হাট ফোড়ার মধ্য দিয়ে দোতরা, মালটিয়া, চারী, কল্লা, ইরতা এবং সিংগাইর উপজেলার উত্তর সীমান্তে ধলেশ্বরীর সামান্য উত্তরে সুদার, খোরগোয়া, চর সংগঙ্গার, ফোর্ড নগর ও সোয়াপাড়ার উত্তরে ধলেশ্বরীতে মিলেছে।
গাজীখালি এক সময় গুরুত্বপূর্ণ নদী ছিল। বর্তমানে তা বর্ষাকালীন ক্ষীণধারা মাত্র । শুষ্ক মৌসুমে এর নাব্যতা থাকে না। বিশ শতকের প্রথম দশকের মধ্যেই ধলেশ্বরী নয়াপাড়া থেকে মকিমপুর পর্যন্ত গাজীখালির প্রবাহ গ্রাস করে ফেলে। এতে গাজীখালির নির্ধারিত খাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং নিম্ন প্রবাহটি সম্পূর্ণ অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে।
ক্ষীরাই নদী :
ক্ষীরাই নদী প্রাচীন ধলেশ্বরীর একটি শাখা। এর উৎপত্তিস্থল বর্তমান ঘিওর উপজেলা সদরের পূর্ব উত্তর প্রান্তে। উত্তর গোবিন্দপুরের উত্তরে ধলেশ্বরী থেকে বের হয়ে বলরামপট্টী, দাড়ি শিবপুর, পূর্ব শিবপুর, পূর্ব দোতরা, কামদি, বড় ধুলন্ডি, মহাদেবপুরের মধ্য দিয়ে পূর্বগামী হয়ে ক্ষীরাই ও পাটাইকের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে জোকার নিকট এসে আবার দক্ষিণ দিকে মোড় নিয়েছে। তারপর তা চরঘোনা, শোলধারা বিলের পশ্চিম পার্শ্ব বেয়ে বীজপাড়া, বুতুনী এবং বিল বারইর মধ্যবর্তীস্থলে ইছামতির একটি পূর্বগামী শাখার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। অতপর উক্ত মিলিত ধারা ক্ষীরাই নদী নাম ধারণ করে গাংডুবির মধ্য দিয়ে বানজানের দক্ষিণে অপর একটি স্রোতধারার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ক্ষীরাই নদীর অস্তিত্ব বর্তমানে নেই বললেই চলে। ঊনিশ শতকের শেষার্ধে এ নদীর যে ক্ষীণ ধারা সজীব ছিল বিশ শতকের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দশকের মধ্যেই তা ভরাট হয়ে যায়।
মন্দা নদী :
মন্দা ধলেশ্বরীর একটি খাত। ঘিওর উপজেলার বিঙ্খরীর নিকট প্রাচীন ধলেশ্বরী এর উৎপত্তিস্থল। বিঙ্খরী থেকে এ নদী দক্ষিণগামী হয়ে বালিয়াখুড়া, পুটিয়াজানী, কাটাংগা ও ঠাটাংগার মধ্যবর্তী স্থান বেয়ে কুন্দরিয়া বাঠুইমুড়ি ও শ্যামনগরের গোয়ালন্দর চকের মধ্য দিয়ে কলতার নিকট কান্তাবতী নদীতে মিলিত হতো। ক্ষীরাই নদীর মত মন্দা নদীও বর্তমান শতাব্দীর শুরুতেই অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে।
ভুবনেশ্বর নদী :
ভুবনেশ্বর নদী এক কালে মানিকগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে বাহিত হতো। শোনা যায় এ নদী কোশী ও তিস্তা নদীর জলধারাকে অবলম্বন করে উত্তর পশ্চিম থেকে দক্ষিণ এবং ক্রমশঃ দক্ষিণ পূর্বে বাহিত ছিল। শ্রীশকুমার কুন্ডর মতে ইছামতি ও গঙ্গাধারার সম্মেলনের ফলে যে ধারা (ভুবনেশ্বর নদী) স্তিমিত হয়ে পড়ে; অষ্টাদশ ঊনিশ শতাব্দীতে ভুবনেশ্বর নদের কোন চিহ্ন আর বজায় থাকে না। একমাত্র ফরিদপুরের দণি প্রান্তে একটি ক্ষীণ ধারার পরিচয় ছাড়া। উইলিয়াম হান্টারের মতে ভুবনেশ্বর নদই আড়িয়াল খা নদীর ভিন্নরূপ। এ নদীর গতিপথ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, It first flows in a south easterly and after words in a southerly direction, finally taking its exit from the district (of Faridpur) near Madaripur on the northern boundary of Bakarganj at the point where the Kumar river flows into it from the west. এ নদীর কোর রেখা বর্তমানে নেই। শুধু মানিকগঞ্জ জেলার দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের চরভুবনেশ্বর, ভুবনেশ্বর, বিল ভুবনেশ্বর প্রভৃতি নামগুলো বিলুপ্ত ভুবনেশ্বর নদীর কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
( লেখকঃ ইতিহাস গবেষক, প্রাবন্ধিক এবং প্রাক্তন অধ্যক্ষ ইবরাহীম খাঁ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ভূঁঞাপুর, টাঙ্গাইল। স্থায়ী ঠিকানা: ১, গংগাধরপট্টি,ব্লক ‘এ’ থানা রোড মানিকগঞ্জ।)
ছবি ও লেখা মানিকগঞ্জের সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুদ্দিন আহম্মেদ নান্নুর ফেসবুক থেকে নেওয়া।
মানিকগঞ্জ২৪/ ৩১ অক্টোবর ২০২০।