দুর্যোগ সহনীয় ঘর বরাদ্ধে টাকা নেবার অভিযোগ বরাইদ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

সাটুরিয়া প্রতিনিধি, ২১ সেপ্টম্বর:

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা বরাইদ ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ দেওয়া অভিযোগ পাওয়া গেছে। আরও টাকার দাবীতে কাজ বন্ধ রেখেছে চেয়ারম্যান, অভিযোগ বরাদ্ধ পাওয়ার পরিবারের। তবে টাকার নেবার বিষয়টি বরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান হারুন আর রশিদ অস্বীকার করেছেন।

এদিকে উপজেলা প্রশাসনের বারবার আনুষ্ঠানিক তাগাদা দেযার পরও নির্দিষ্ট সময়ে বাসগৃহ নির্মান কাজ শেষ না করারও অভিযোগ রয়েছে। গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসুচীর আওতায় দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ বরাইদ ইউনিয়নে এ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৪ বাসগৃহ বরাদ্ধের তিনটিই অসমাপ্ত রয়েছে।

 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাইদ ইউনিয়নে মোট চারটি বাসগৃহ বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১০ ফুট বাই ১০ ফুট মাপের দুটি ঘর, একটি ল্যাটট্রিন, একটি রান্নাঘর, ও বারান্দা সহ একটি বাসগৃহের নির্মাণ খরচ বাবদ বরাদ্ধ দরা হয়েছে হয় ২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। বাসগৃহ নিতে বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তির কোন টাকা লাগে না। কিন্তু বরাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন আর রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, টাকার বিনিময়ে ঘর বরাদ্ধ দিয়েছেন।

বরাইদ ইউনিয়নের আগ সাভার গ্রামের আ. সাত্তার কানুর ছেলে মো. শাহিনুর হক প্রবাসী একটি বাসগৃহের বরাদ্দ পেযেছেন। এখনও তিনি প্রবাসী।

শানিনুরের স্ত্রী শেফালী আক্তার বলেন, চেয়ারম্যানকে নগদ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আমার স্বামীর নামে ঘরের বরাদ্দ পেয়েছি। কিন্তু কিছু কাজ করে আারও ১০ হাজার টাকা দাবি করেছেন হারুন চেয়ারম্যান। টাকা না দিলে কাজ শেষ করবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। আমার স্বামী বিদেশে থাকলেও করোনার কারনে সেখানে কোন কাজ নেই। উল্টো মাসে মাসে দেশ থেকে টাকা পাঠাতে হয়। দুই সন্তান নিয়ে বর্তমানে আমার বাবার বাড়িতে উঠেছি। ঘরের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা বাবা এবং ভাইদের কাছ থেকে নিয়ে চেয়ারম্যানকে দিয়েছি। কিন্তু বাকি দশ হাজার টাকা দেবার মত সামর্থও নাই তাই ঘরের নির্মাণ কাজও শেষ হয় না।

এদিকে মো. শাহিনুরের বরাদ্ধকৃত বাসগৃহ নির্মাণ কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমাপ্ত করতে না পারায় সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বরাইদ ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে তিন দফায় কারন দর্শানো নোটিশ দেন। সর্বশেষ নোটিশ দেন গত ৩ সেপ্টেম্বর। নোটিশের তথ্য অনুয়াযী এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে চেয়ারম্যান মোট ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। নোটিশে আরও বলা হয়েছে গত ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা হয়নি। নোটিশ পাওয়ার তিন কর্ম দিবসের মধ্যে কারন দর্শানোর জন্য চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়। চেয়ারম্যানকে একই রকম নোটিশ দেয়া হয়েছে বরাদ্ধ প্রাপ্ত উত্তর বরাইদ গ্রামের নজরুল ইসলাম, আগ সাভার গ্রামের মোহিরন বেগমের বাসগৃহ নির্মান কাজ শেষ না করার জন্য।

সাটুরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহারিয়ার মাহমুদ রনজু মোবাইল ফোনে বলেন, বাসগৃহ বরাদ্ধ বাবদ কোন টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে নির্দিষ্ট সময় কাজ শেষ না হওয়া তিন দফায় চেয়ারম্যানকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুর আলম বলেন, টাকা নিয়ে ঘর বরাদ্ধ, বিষয়টি প্রমাণীত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে টাকার নেবার বিষয়টি বরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান হারুন আর রশিদ অস্বীকার করে বলেন, বন্যার কারনে শাহিনুরের ঘরের ভিটায় মাটি ভরাট করতে পারি নাই। ফলে নির্মাণ কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। দ্রুত মাটি ভরাট করে বাকী কাজ সম্পন্ন করা হবে। সামনেই নির্বাচন কোন অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে আমার নামে ঐ মহিলা মিখ্যাচার করছেন।  কোন টাকা নেওয়ার বিষয়টি দুরের কথা উল্টো শহিনুরের স্ত্রী বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আরো বলেন, সে নিজের বাড়িতে থাকে না। ঘরের দরজা, জানালা রাখার কাজে সে সহায়তা করছেন না।

মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০।

আরো পড়ুুন