মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি, ১২ অক্টোবর
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি জেলার প্রবেশ পথ হিসেবে পরিচিত মানিকগঞ্জ। ঢাকা থেকে পাটুরিয়ার দূরত্ব প্রায় ৯২ কিলোমিটার। ঢাকা-পাটুরিয়া সড়ক পথে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করছে।
ভালো পরিবহন না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীসাধারণকে। লক্কর ঝক্কর ভাঙাচোরা গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন, যেখানে-সেখানে স্টপেজ দেয়া আর হেলপার-ড্রাইভারদের দুর্ব্যবহারে যাত্রীদের দুর্ভোগ এখন চরমে। দীর্ঘদিন ধরে মানিকগঞ্জবাসী ঢাকা-মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া পথে রেললাইন স্থাপনের দাবি করে আসছেন। এ নিয়ে একাধিকবার মানববন্ধন ও সভা-সেমিনার করা হলেও রেললাইন স্থাপনে কোনো অগ্রগতি নেই।
১৯৭৩ সালে মানিকগঞ্জ জেলায় রেললাইন নির্মাণের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। ৪৭ বছর পাড় হলেও রেল প্রকল্পের মুখ দেখেনি মানিকগঞ্জবাসী। প্রতিদিন চাকরি, ব্যবসা ও লেখাপড়াসহ বিভিন্ন কাজে পাটুরিয়া-ঢাকা যাতায়াতকারী হাজার হাজার যাত্রী সময়মতো তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না। তাছাড়া ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। তাই যোগাযোগের সবচেয়ে নিরাপদ, আরামদায়ক ও স্বল্প ব্যয়ের মাধ্যম হিসেবে রেল সুবিধার জন্য অধীর আগ্রহে মানিকগঞ্জবাসী।
ঢাকার নিয়মিত যাত্রী ওয়াহাব চৌধুরি জানান, আমি বেসরকারী একটি প্রাইভেট ব্যাংকের হেমায়েতপুর ব্রাঞ্চে কাজ কর্মরত আছি। মানিকগঞ্জ থেকে সপ্তাহে প্রায় পাঁচদিন আমাকে এই রোডে যাতায়াত করতে হয়। ৪৪ কিলোমিটার এই রাস্তায় সর্বোচ্চ এক ঘন্টা লাগতে পারে কিন্তু আমাকে বাসা থেকে বের হতে হয় প্রায় ২ ঘন্টা সময় হাতে নিয়ে। যদি ঢাকা-মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া রেললাইন স্থাপন করা হয় তাহলে আমার মত হাজার হাজার যাত্রী সময়মতো তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারতো।
সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতালে কর্তব্যরত ইন্টার্ণ ডাক্তারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পাটুরিয়া-ঢাকা সড়ক পথে নানা ধরণের বাস-মিনিবাস সার্ভিস চালু থাকলেও যাত্রীসাধারণের ভোগান্তির শেষ নেই। অতিরিক্ত যাত্রী বহন, যেখানে-সেখানে স্টপেজ দেয়া ও গাড়ীর ফিটনেস ভাল না থাকার কারণে ৪০ কিলোমিটার রাস্তা পার হতেই দুই ঘন্টা চলে যায়। সড়কপথে যোগাযোগে অনেক সময় লেগে যায়। রেলপথ চালু থাকলে স্বল্প সময়ে অল্প খরচে যাতায়াত করা যেত। যাত্রাটাও হতো নিরাপদ এবং আরামদায়ক।
মানিকগঞ্জ গোলড়া এলাকার একাধিক সবজি ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে তারা জানান, প্রতিদিন ভোরে শাকসবজি ও বিভিন্ন কাঁচামাল নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন পাইকারী বাজারে যেতে হয়। সড়কপথে যোগাযোগে অনেক সময় লেগে যায় এবং পরিবহণ খরচও বেশি লাগে। অন্যান্য জেলার মত যদি মানিকগঞ্জে রেল চালু থাকতো তাহলে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনের অনেক খরচ কমে যাবে।
এনজিও কর্মী শাহিনুর রহমান বলেন, ঢাকা-পাটুরিয়া সড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অদুর ভবিষ্যতে এর গুরুত্ব আরও বাড়বে। যা সড়ক পথে মেটানো সম্ভব নয়। একমাত্র রেলপথ নির্মাণ করলেই এই সমস্যা দূর হবে। ঢাকা-মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়ায় রেললাইন স্থাপন করলে কেবল মানিকগঞ্জবাসীই নয় দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষও ঢাকায় সহজে যাতায়াত করতে পারবে।
তিনি আরো জানান, রেল যোগাযোগ নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব। পাটুরিয়া থেকে ঢাকায় রেল যোগাযোগ চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। ঢাকায় নিয়মিত যাতায়াতকারী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী এবং চাকরিজীবীরা নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস জানান, পাটুরিয়া-ঢাকায় রেলপথ মানিকগঞ্জবাসীর প্রাণের দাবী। রেল চালু হলে মানুষ অল্প সময়ে, অল্প খরচে ও নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও অনেক কমে যাবে। মানিকগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের এই দাবির কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করা যায় মানিকগঞ্জবাসীর সপ্ন পূরণ হবে।
মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ২৭ অক্টোবর ২০২০।