ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহকে অনুসরণ করুন

মিজানুর রহমান মিরু, ৬ জুলাই ২০২০:

বাংলাদেশে বর্তমান চিকিৎসক সমাজে ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ একজন আলোচিত নাম। যিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান।

আমার জানামতে উনি একজন আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসক। আমি উনাকে চিনি আজ থেকে ১০/১২বছর পূর্বে থেকে। আমার মা উনার নিয়মিত রোগি ছিলেন। উনার ফি মাত্র ৩০০ শত টাকা। রিপোর্ট দেখাতে কোন ফি গ্রহন করেন না। প্রতিটি রোগীর সাথে মানবিক আচরন করে থাকেন।

অথচ আমাদের দেশে ডাক্তার মানেই ফি ১০০০টাকা। পিজি হাসপাতালের এক কিডনী ডাক্তার আনোয়ারা খান হাসপাতালে বসেন। তার চেম্বারে রুমের সামনে লিখা দেখতে পেলাম ভিজিট-১২০০টাকা, রিপোর্ট দেখাতে ৮০০ টাকা। আমার প্রশ্ন হলো আমি ঐ ডাক্তারকে দেখালাম, সে বললো এই এই পরীক্ষাগুলে করিয়ে নিয়ে আসেন। আমি পরীক্ষা করিয়ে তাকে দেখাতে আবার টাকা দিতে হবে কোন যুক্তিতে? সে রিপোর্ট দেখে আমাকে ঔষধ দিবে সেই জন্যেইতো ঐ ১২০০টাকা ভিজিট দেওয়া হল।

এরপর কমপক্ষে ৫০০০ টাকার বিভিন্ন পরীক্ষা, রোগীকে ধরিয়ে দিবে, সেখান থেকে কমিশন কমপক্ষে ১০০০ টাকা। অর্থাৎ ১২০০+৮০০+১০০০ মোট ৩০০০টাকা একজন রোগী থেকে আয় করে থাকে। প্রতিদিন ৫০ জন রোগী দেখলে মাসে ৪৫ লক্ষ টাকা। এর সাথে রয়েছে সরকারী বেতন। যে আয়ের কোন টেক্স সরকারকে দিতে হয় না।

আমাদের দেশে ডাক্তারদের ক্ষেত্রে কিংবা বেসরকারি মেডিকেল,ক্লিনিক এর ক্ষেত্রে সরকারের কোন নীতিমালা না থাকার কারনে ডাক্তাররা চরম বেপরোয়া হয়ে গিয়েছে। রোগীকে সেবা দেওয়ার কোন মানষিক অবস্থা তাদের নেই। শতভাগ ব্যবসায়ীক এবং অসৎ ব্যবসায়ী।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রতিটি বেসরকারি মেডিকেল গুলোতে সরকার নির্ধারিত ফি নিতে হয়। রুবি হাসপাতাল, পেয়ারলেস হাসপাতাল, রবীন্দ্র সরবী হাসপাতাল,এপোলো হাসপাতাল প্রমুখ গুলোতে মেডিসিন, কিডনি, হ্রদরোগ,শিশু, গাইনী এ সকল বিভাগের ফি মাত্র ৫০০ টাকা, আর চোখের ডাক্তার ফি মাত্র ২০০ টাকা। আর তাদের ব্যবহার দেখলে রোগী অর্ধেক এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। আর আমাদের দেশে রোগী বসিয়ে রেখে ঔষধ কোম্পানির লোকদের সাথে গল্প করে। স্ত্রী কিংবা স্বামীর সাথে মেবাইলে কথা বলত বলতে ব্যবস্থাপত্র লিখে থাকে।

ডাক্তার এবিএম আব্দুল্লাহ যদি চায় তার ভিজিট ৫০০০ টাকা নিবে তারপরও তার নিকট রোগী যাবে। তার কারন উনি একজন ভালো চিকিৎসক, অনেক সময় নিয়ে রোগী দেখেন, ভাল ব্যবহার করে থাকেন,কমিশন পাওয়ার জন্য অযথা এক গাধা পরীক্ষা নিরিক্ষা দেন না রোগীকে। তার ভিজিট মাত্র ৩০০টাকা।তিনি মানবতার ফেরিওয়ালা।

দেশে করোনায় চিকিৎসকদের মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ২ শতাংশ। পেশাজীবিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৭২৫ জন আক্রান্ত এবং মৃত্যু ৬০ জন।এই মৃত্যু এবং আক্রান্ত ডাক্তাররা রোগীর সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত কিংবা মারা যায় নি।

বেশির ভাগ ঘরে বসেই এই অবস্থা। আমার পরিচিত একজন ডাক্তার তার পোষ্টিং কুষ্টিয়া, অথচ তাকে সারা মাস ঢাকায় দেখি। আর এক ডাক্তার সকালে নারায়ণগঞ্জ ল্যাব এইডে, বিকেলে ঢাকা ল্যাব এইডে বসেন অথচ তার পোষ্টিং মানিকগঞ্জ। এভাবে চলছে তাদের সেবামূলক পেশার কার্যক্রম। দূর্নীতিবাজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, দূর্নীতিবাজ মন্ত্রণালয়ের কারনে চিকিৎসক সমাজও আজ ব্যবসায়ী এবং অমানবিক হয়ে উঠেছে।

আমরা যদি ডাঃ এবিএমআব্দুল্লাহ স্যারের মত হই বা উনাকে অনুসরণ করি তাহলে রোগীরা সেবা পেত,ভারতেও যেতে হতো না এবং করোনায় এত চিকিৎসক আক্রান্ত কিংবা মৃত্যু হতো না। কাউকে কষ্ট দেওয়ার জন্য নয়, নিজের কষ্ট থেকেই আমার এ-ই লিখা । আসুন একটু মানবিক হই।

মিজানুর রহমান মিরু, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, জাতীয় পার্টি।

আরো পড়ুুন