সিংগাইর প্রতিনিধি, ১৯ আগষ্ট:
ইংল্যান্ডের রামসগেট কাউন্সিলের মেয়র রওশন আরা দোলন তার মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ইরতাকাশিমপুর গ্রামে গ্রামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে চান।
সম্প্রতি দ্বিতীয়বার রামসগেটের মেয়র হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি এই সিদ্ধানেন্তর কথা জানিয়েছেন । ইরতাকাশিমপুর কাঁঠাল বাড়ি গ্রামে রামসগেটের নামে গড়া সংস্থার মাধ্যমে করোনাকালে রমজান মাসে তিনশ মানুষকে দুই বেলা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
মেয়র রওশন আরা দোলন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশে এসেছিলেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তালেবপুর আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। দেশে সফরকালে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য প্রশাসনসহ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
ইংল্যান্ডের রামসগেট কাউন্সিলের মেয়র রওশন আরা দোলন জন্মগ্রহণ করেন মানিকগঞ্জের ইরতাকাশিমপুর গ্রামে। তাঁর পিতা প্রকৌশলী রজ্জব আলী খান উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে আসেন ১৯৬৩ সালে। তিনি বাবা-মার সঙ্গে ১৯৭৭ সাল থেকে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। শৈশবের পড়া-লেখা শেষে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন রয়েল চার্টার খ্যাত ইউনিভার্সিটি অব কেন্ট থেকে। ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ইউনিভার্সিটির প্রথম চ্যান্সেলর ছিলেন পঞ্চম জর্জের পুত্রবধূ প্রিন্সেস ম্যারিনা।
মিস রওশন আরা উচ্চ শিক্ষা শেষে যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল লেবার পার্টির সাথে যুক্ত হয়ে নানা সমাজ সেবামূলক কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি ২০১৯ সালে লেবার পার্টি থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন লাভ করেন। এই নির্বাচনে তিনি প্রথমবারের মতো এশীয় বংশোদ্ভূত কোনও মুসলিম নারী হিসেবে ৫৬ জন কাউন্সিলরের মধ্যে সর্বাধিক ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।
বাংলাদেশের গৌরব মিস রওশন আরা এই সমাজে অত্যন্ত জনপ্রিয় এক রাজনৈতিক প্রতিভা। স্থানীয় বাসিন্দা মি. টম জে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘মিস রওশন আরা তার শালীন-শোভন আচরণের মাধ্যমে আমাদের মনের গভীরে জায়গা করে নিয়েছেন। আমরা দলমত নির্বিশেষে তাকে ভোট দিয়েছি।’ অপর এক বাসিন্দা মিস রেবেকা স্কট বলেন, ‘আমি যখনই কোনও কাজে তার কাছে গিয়েছি, তখনই তাকে একজন ভালো বন্ধু হিসেবে পেয়েছি।’ বাংলাদেশী অভিবাসী বেলাল আহমেদ বলেন, ‘মিস রওশন আরা এই এলাকায় দারুণ জনপ্রিয়। তিনি সত্যিই বাংলাদেশের এবং যুক্তরাজ্যে বাঙালি কমিউনিটির গর্ব।’
মিস রওশন আরা বলেন, ‘আমি একজন মুসলিম হিসেবে গর্বিত। বিশ্বের নানা দেশে মুসলিম জাতি আজ নিগৃহীত-নির্যাতিত। আমি একজন মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবেই কাজ করছি। একজন মুসলমান সততা-নিষ্ঠা এবং উদার নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সমাজের প্রতিটা মানুষের সেবা করতে সক্ষম, ইতোমধ্যেই আমি তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। মুসলমান কখনোই ঘাতক নয়। তারা সকল মানুষ-মানবতার দায়ত্বশীল সেবক।’
বিদেশে থাকলেও রওশন আরা নিজের জন্মস্থানকে ভুলে যাননি। সেখানকার উন্নয়নেও কাজ করছেন তিনি। রামসগেটের মেয়র বলেন, ‘আমি আমার জন্মস্থানকে কখনোই ভুলে যাইনি। আমার জন্মস্থান ইরতাকাশিমপুর গ্রামে প্রায় প্রতিবছর বেড়াতে যাই। চেষ্টা করি সেখানকার পিছিয়ে থাকা নারীদের সহায়তা করতে। এজন্য ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেছি রামস-বাংলা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি দাতব্য সংস্থা।’ এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অসহায় দরিদ্রদের সহায়তা করার চেষ্টা করেন বলে তিনি জানান।
গত বছর নভেম্বরে তিনি ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের ১৯ হাজার কাউন্সিলরের মধ্যে সেরা কাউন্সিলর হিসাবে পুরস্কৃত হন রওশন। এবছর চলতি করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে যুক্তরাজ্যের সব নির্বাচন এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। ফলে গত ২৯ জুলাই রামসগেট টাউন কাউন্সিলের এক সভায় সরকারি দল কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টির সর্বসম্মতিতে তিনি মেয়র পদে পুনঃদায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করবেন।
মানিকগঞ্জ২৪/ ১৯ আগষ্ট ২০২০।